avertisements 2

১৪শ কোটি টাকা লাপাত্তা

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১১:৩২ পিএম, ৩০ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৫২ পিএম, ৫ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২৪

Text

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে পিকে হালদার প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দেশের আটটি ব্যাংকে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে জমা ১১০০ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। জব্দ করা হয়েছে হিসাবগুলো। বাকি ১৪০০ কোটি টাকা বিভিন্ন হিসাব ঘুরে একটি পর্যায়ে নগদ তুলে নেওয়া হয়েছে।

অথবা পণ্য আমদানির নামে স্থানান্তর করা হয়েছে বিদেশে। কিন্তু পণ্য দেশে আসেনি। এভাবেই অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ওপর পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) আলাদা দুটি তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে নামে-বেনামে কোম্পানি গঠন করে পিকে হালদার ও তাদের সহযোগী একটি চক্র চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে শেয়ার কিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নেন।

প্রথমদিকে তার নিজ নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কিছু শেয়ার থাকলেও পরে তা হস্তান্তর করেন। বেনামে আরও কিছু ভুয়া প্রতিষ্ঠান তৈরি করে এ থেকে ঋণ বাবদ ২৫০০ কোটি টাকা বের করে নেন। এ অর্থের মধ্যে ১৪০০ কোটি টাকা একাধিক হিসাবে স্থানান্তর করেছেন।

পিকে হালদার ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয় প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ১২০০ কোটি টাকা, পিকে হালদারের হিসাবে ২৪০ কোটি টাকা এবং তার মা লীলাবতী হালদারের হিসাবে জমা হয় ১৬০ কোটি টাকা।

এসব হিসাবে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বাইরে থেকে এসেছে ২০০ কোটি টাকা। হিসাবগুলোতে বর্তমানে জমা আছে মাত্র সাড়ে ৮ কোটি টাকা টাকা। বাকি টাকা দেশের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নেই।

এমনকি কোনো ব্যক্তির কাছে আছে এমন রেকর্ডও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সন্দেহ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে টাকাগুলো বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, টাকা নগদ আকারে তুলে নেওয়ার কারণে সেগুলোর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু অর্থের সন্ধান মিলেছে, সেগুলো এক হিসাব থেকে নগদ তুলে অন্য হিসাবে জমা করা হয়েছে। পরে আবার তুলে নেওয়া হয়।

এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, কিন্তু সেগুলোর পণ্য দেশে আসেনি। এর মানে ওইগুলো পাচার করে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পিকে হালদার আর্থিক খাতে যে জালিয়াতি করেছে তা নজিরবিহীন।

এখন এর ব্যাপক তদন্ত করে টাকা কীভাবে কোথায় গেছে তা বের করা উচিত। এর সঙ্গে যারা জড়িত, প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা জড়িত বা যাদের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের জালিয়াতি করার সাহস না পায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পিকে হালদারের নামে ব্যাংক এশিয়াসহ কয়েকটি ব্যাংকের হিসাবে বিভিন্ন সময়ে স্থানান্তর করা হয় ২৪০ কোটি টাকা। পিকে হালদার নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান হাল ট্রাভেল এজেন্সির নামে স্থানান্তর করা হয় ৪০৭ কোটি টাকা।

ফার্স্ট কমিউনিকেশনের নামে ৮২৩ কোটি টাকা। সুখাদা লিমিটেডের নামে ২০ কোটি ৪১ লাখ টাকা স্থানান্তর হয়। এসব অর্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় তুলে নেওয়া হয়েছে। যেগুলো পাচার করা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

পিকে হালদারের ভাই প্রীতিশ কুমার হালদারের নামে গড়ে তোলা হয়েছে, হাল টেকনোলজি, হাল ট্রিপ টেকনোলজি, পিঅ্যান্ডএল হোল্ডিং, মাইক্রো টেকনোলজিসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ৫০০ কোটি টাকার বেশি স্থানান্তর করা হলেও এখন টাকা নেই বললেই চলে। এর মধ্যে বেশ কিছু হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের মোট আমানতের পরিমাণ ২৭৬৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এফডিআর করা আছে ৫১৪ কোটি টাকা। এসব অর্থ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দুর্বল মানের তিনটি প্রতিষ্ঠানে ওই অর্থ রাখা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ ৩৮৯৫ কোটি টাকা। বাকি টাকা মূলধন, মুনাফা ও ধার থেকে দেওয়া হয়েছে। মোট ঋণের মধ্যে আড়াই হাজার কোটি টাকাই আত্মসাৎ করেছে পিকে হালদার চক্র।

সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের এক সময় বেশ সুনাম ছিল। এটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান হয়ে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশও দিয়েছে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেয় পিকে হালদার গ্রুপ।

এরপরই প্রতিষ্ঠানটির ভিত্তি ভেঙে পড়তে শুরু করে। এখন দেউলিয়ার পথে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের বেশির ভাগ শেয়ারই ছিল হাল ইন্টারন্যাশনাল, বিআর ইন্টারন্যাশনাল, নেচার এন্টারপ্রাইজ ও নিউটেক এন্টাপ্রাইজের নামে। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ মালিকানা ছিল পিকে হালদার ও তাদের নিকটজনদের হাতে। তারা পর্ষদে বসে নামে-বেনামে লুটপাট শুরু করে।

বিষয়:

আরও পড়ুন

avertisements 2