ছিলাম রাজা এখন ফুটপাতের কাঙাল!

ঢাকায় আপনি কত দিন ধরে আছেন?
ঢাকায় আমি ৪৫ বছর ধরে আছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই বছরের মাথায় ঢাকায় এসে ছিদ্দিকবাজারে উঠি।
গ্রাম থেকে ঢাকায় এলেন কেন?
আমার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা। দেশ তো শুধু স্বাধীন হয়েছে। মানুষের কাজকর্ম নাই, ক্ষেতে ফসল নাই। যুদ্ধের কারণে সব লণ্ডভণ্ড। মানুষের অনেক কষ্ট। তাই ভাবলাম, ঢাকায় এসে কিছু একটা করতে হইব। গ্রামের বাড়িতে অভাব আছিল। ঢাকায় না এসে উপায় ছিল না।
ঢাকায় আসার পর কী করলেন?
ঢাকায় আইসা নানা কাজ করেছি। এরপর এক জুতা কম্পানিতে চাকরি নিছিলাম। সেই জুতা কম্পানি এখন বাংলাদেশের নামকরা কম্পানি। আমি আছিলাম জুতার কারিগর। টানা ১৮ বছর চাকরি করেছি। তারপর এরশাদ সরকারের প্রিয়ডে ছিদ্দিকবাজারে নিজেই জুতার কারখানা করি। জুতার ব্যবসা জমজমাট আছিল। ব্যবসা করে বেশ টাকাও জমাইছিলাম। ঢাকায় এসে বিয়ে করেছি, শ্বশুরবাড়ি থেকে পৈতৃক সম্পত্তিও পেয়েছি। কিন্তু একটা ব্যাধি আমাকে সর্বস্বান্ত করেছে।
কী অসুখ ছিল?
ডাক্তাররা বলেছে, এটি এক ধরনের ক্যান্সার। আমি তো ৯ মাস কারখানার বাইরে আছিলাম। হাসপাতালে খরচ করেছি ৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া ওষুধপাতি তো আছেই। ওই ৯ মাস কারখানা চালাইতে পারি নাই। কারিগর যারা আছিল, তারাও নাই। আছিলাম রাজা—এখন ফুটপাতের কাঙাল! আমি চাইলেও আর আগের মতো জুতার কারখানা চালু করতে পারব না। ডাক্তার বলছে, জুতার ফ্যাক্টরিতে কাজ করা বন্ধ। চামড়ার গন্ধ আর রঙের গন্ধ নেওয়া বারণ। জুতার কারখানায় চাকরি করার কারণে আমার ওই রোগ হইছে। এখন আমি তো জুতা বানাই না। কারখানায় ছোট একটা ছেলেকে রাখছি। ওই ছেলে দু-চারটা যা বানায়, তা-ই ফুটপাতে বিক্রি করি।
বেচাকেনা কেমন হয়?
আগে তো ছয় জোড়া জুতা বানাইলে কমপক্ষে এক হাজার টাকা লাভ হইত। এখন তো আগের মতো লাভ করার সুযোগ নাই। যত দামি জুতাই হোক, ফুটপাতে তা বিক্রি হয় কম দামে। কোনো দিন ২০০ টাকা, কোনো দিন ৫০০ টাকা লাভ থাকে।
ঢাকায় ৪৫ বছরের জীবন, কেমন অভিজ্ঞতা হলো?
ভালো-মন্দ সব ধরনের অভিজ্ঞতাই আছে। আগে তো ঢাকা বলতে শুধু পুরান ঢাকা আছিল। এখন তো ঢাকার সীমানা শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। ৪৫ বছর আগের ঢাকায় তো এত লোক আছিল না। এখন তো মাছের বাজারের মতো গিজগিজ করে।
ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?
সংসারে আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। আমি তো ঢাকায়ই স্থায়ী হয়ে গেছি। চাইলেও তো আর নেত্রকোনায় ফিরতে পারব না। এভাবে ফুটপাতে ব্যবসা করেই বাকি জীবনটুকু কাটাইতে চাই।